অভিশপ্ত এলজিবিটিকিউদের আবাসন ও উত্তরাধিকার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিতে সরকারের বিরুদ্ধে রায় বহাল রাখলো হংকংয়ের সর্বোচ্চ আদালত।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দেশটির প্রধান বিচারপতি এন্ড্রু চিউং সরকারের আপিলের বিরুদ্ধে পূর্বের রায় বহাল রাখার নতুন রায় প্রদান করেন।
নতুন রায়ে তিনি লিখেন, আদালত কর্তৃক এলজিবিটিকিউদের অধিকার নিশ্চিতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হংকং সরকার যে আপিল করেছে তা সর্বসম্মতভাবে বাতিল করেছে সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত আপিল বিভাগ।
সরকার পক্ষের আইনজীবী মনিকা কারস-ফ্রিসক আপিলের শুনানিতে বলেছিলেন, সন্তান প্রজননের প্রাকৃতিক উপায় ও দুই বিপরীত লিঙ্গের মধ্যকার স্বাভাবিক পারিবারিক বন্ধনকে উৎসাহিত করার পরিকল্পনাকে সামনে রেখে দেশের আবাসন ব্যবস্থা ও আবাসন নীতিমালা সাজিয়েছিলো সরকার। এলজিবিটিকিউর পক্ষে আদালতের রায় বহাল রাখা হলে সমাজে ও রাষ্ট্রে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
অপরদিকে প্রধান বিচারপতি এন্ড্রু চিউং এই বলে তার যুক্তি খারিজ করে দেন যে, ভাড়ার পাবলিক ফ্ল্যাট ও শহরে বাড়ির মালিকানা প্রকল্পের আওতায় বিক্রি হওয়া ভর্তুকিযুক্ত ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে সমকামী বা এলজিবিটিকিউদের বাদ দেওয়ার সরকারী নীতি ন্যায়সঙ্গত হতে পারে না। ফ্ল্যাট ভাড়ায় নেওয়ার কিংবা ক্রয়ের অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখার অর্থ হলো তাদের এক ছাদের নীচে পারিবারিক জীবনযাপনের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা।
এছাড়া উত্তরাধিকার ইস্যুতেও সরকারের বিপক্ষে রায় দেয় চূড়ান্ত আপিল বিভাগের বিচারক প্যানেল। বিচারক জোসেফ ফক এবং রবার্তো রিবেইরো রায়ে লিখেন, সরকার সমকামী দম্পতিদের উত্তরাধিকার পাওয়ার ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করার পরিবর্তে উত্তরাধিকার না পাওয়ার বিভেদ জিইয়ে রেখেছে। অথচ মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে স্বামী এবং স্ত্রীর জন্য প্রযোজ্য উত্তরাধিকার সুবিধাগুলো তাদের জন্যও প্রযোজ্য হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু তা থেকে সমকামী দম্পতিদের বঞ্চিত রাখা হচ্ছে। তাই সরকারের বিদ্যমান নিয়মগুলোকে তারা বৈষম্যমূলক এবং অসাংবিধানিক বলে মনে করেন।
সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, ৬ বছর আগে হংকংয়ের অভিশপ্ত সমকামিতায় লিপ্ত নাগরিক নিক ইনফিঙ্গার ও তার পুরুষ সঙ্গী দম্পতি পরিচয়ে পাবলিক ফ্ল্যাট ভাড়া নিতে চেয়ে ব্যর্থ হোন। কেননা দেশটিতে সমলিঙ্গের মাঝে দাম্পত্যের বিকৃত ও অরুচিকর সম্পর্ক রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত নয়। আর পাবলিক ফ্ল্যাট ভাড়ায় নেওয়ার অন্যতম শর্ত হলো নারী-পুরুষ দম্পতি হওয়া। তাই অভিশপ্ত সমকামী নিক ইনফিঙ্গার সরকারের এই আইনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা দায়ের করে।
এছাড়া উত্তরাধিকার নীতি নিয়ে মামলা দায়ের করেছিলেন আরেক অভিশপ্ত সমকামী হেনরি লি। হংকংয়ের আইন অনুসারে সমকামীরা দম্পতি হিসেবে স্বীকৃত না হওয়ায় সে তার সমলিঙ্গের স্বামী এডগার এনজির সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলো।
পরবর্তীতে দেশটির আদালত এই দুই অভিশপ্ত সমকামীর মামলার শুনানি একসাথে পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে তাদের পক্ষে যার রায় এসেছিলো। সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে পরিবর্তীতে সুপ্রিম কোর্ট বা সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করে। কিন্তু কোর্টের চূড়ান্ত আপিল বিভাগ সরকারের আপিল খারিজ করে দেয় এবং অভিশপ্তদের অধিকার নিশ্চিতে সরকারের বিরুদ্ধে পূর্বের রায় বহাল রেখে আজ নতুন রায় প্রায় প্রদান করে। একটি এলজিবিটিকিউদের আবাসন অধিকার সংক্রান্ত ও অপরটি উত্তরাধিকার প্রাপ্তি সংক্রান্ত।
দেশটির সমকামী সংগঠনগুলো একে নিজেদের এযাবতকালের সেরা অর্জন বলে উল্লেখ করছে। সাধারণ নাগরিকদের ন্যায় রাষ্ট্রীয়ভাবে যেনো তাদের অধিকারগুলো সংরক্ষিত থাকে তারা সেই চেষ্টা শুরু করবেন বলে জানান।
হংকংয়ের ৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় উঠে এসেছে, এলজিবিটিকিউ এক্টিভিস্টদের তৎপরতায় দেশটিতে/ সমকামিতা দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ৬০ শতাংশ মানুষ সমকামিতা ও সমকামী দাম্পত্যের দিকে ঝুকে পড়েছে। সরকারি আইন এর বিস্তার রোধে ব্যর্থ হচ্ছে। বিকৃত ও নোংরা স্বভাবের সমকামী সংগঠনগুলো সাধারণ নাগরিকদের রাষ্ট্রীয় অধিকার পেতে ধারাবাহিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। সমকামিতায় উৎসাহ যুগিয়ে যাচ্ছে।
সূত্র: আল জাজিরা
