গাজ্জা উপত্যকায় ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলি সেনাবাহিনীর স্থল অভিযান শুরুর পর থেকে মোট ৩৫ জন সৈন্য নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী।
আজ বৃহস্পতিবার, দখলকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে বর্বরতা চালিয়ে ৮ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে দখলদার ইসরাইলী বাহিনী। এসময় আরো ১৪ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়াও ইসরাইলি স্নাইপার জেনিন শরণার্থী ক্যাম্পে অবস্থান নিয়েছে বলে জানা গেছে।
গত ৩ দিনে গাজ্জায় ৮টি হাসপাতাল লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এছাড়াও গত এক মাসে জ্বালানি সংকটের কারণে ১৮ টি হাসপাতাল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
গাজ্জায় বেসামরিক নাগরিকদের উপর ইসরাইলি বাহিনীর সম্মিলিত শাস্তি প্রদানের বিষয়টি যুদ্ধপরাধের অন্তর্ভুক্ত বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক। মধ্যপ্রাচ্যে পাঁচ দিনের সফরের অংশ হিসেবে মিশরের রাফাহ সীমান্ত পরিদর্শনের পর এই মন্তব্য করেন তিনি।
ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশ ও তাদের দুর্দশা লাঘব করতে ১০ মিলিয়ন লিটার তেল অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় পাঠাবে বলে জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরাক। এই সাহায্য অবরুদ্ধ ছিট মহলের জেনারেটর ও হাসপাতালগুলোকে সচল রাখতে সাহায্য করবে।
গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর বর্বরতায় ৪৮ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজ্জার সরকারি গণমাধ্যম অফিস।
গাজ্জা উপত্যকায় ইসরায়েলি দখলদারিত্ব অথবা বহিরাগত কোনো পক্ষের অভিভাবকত্ব, ফিলিস্তিনিরা মেনে নেবে না বলে জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের জাতীয় উদ্যোগের মহাসচিব মোস্তফা বারগুতি।
গাজ্জায় বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য দ্রুত ‘মানবিক বিরতি’ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো। সদ্য শুরু হওয়া প্যারিস সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তার মতে এটি ‘অপরিহার্য’ ও ‘তাৎক্ষণিক’ প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। এর জন্য তিনি অন্যান্য দেশের নেতাদেরও একটি যুদ্ধ বিরতির জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
গাজ্জা উপত্যকায় গত রাতেও ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলের বিমান বাহিনী। যার ফলে ফিলিস্তিনি শহীদের সংখ্যা ১০ হাজার ৩২৮ জনে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
গত রাতে হামাসের সাথে মুখোমুখি যুদ্ধে ইসরাইলের একজন সৈন্য নিহত ও দুইজন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী।
রেড ক্রসের ৫ টি ট্রাক ও ২ টি যানবাহন হামলার শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটির আন্তর্জাতিক কমিটি। এই ট্রাকগুলো গাজ্জার হাসপাতালের উদ্দেশ্যে যাত্রা করছিল। হঠাৎ ট্রাক লক্ষ্য করে গুলি চালায় একদল বন্দুকধারীরা। এতে ২ টি ট্রাক সম্পূর্ণ নষ্ট ও একজন চালক আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার, বিদেশি পাসপোর্ট রয়েছে এমন ৩২০ জন মিশরের রাফাহ সীমান্ত দিয়ে গাজ্জা ত্যাগ করেছেন।
উত্তর গাজ্জা ও গাজ্জা শহরের সমস্ত বেকারি বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছে অবরুদ্ধ ছিট মহলের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাদের মতে ইসরাইলি বাহিনীর কৌশলগত লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে এসব খাদ্যের দোকানগুলি। যার ফলে রুটি তৈরির প্রধান উপকরণ ময়দা ও জ্বালানি ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এর পূর্বে, উপত্যকার একের পর এক বেকারি লক্ষ্য করে ইসরাইলি বিমান হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে আল ওয়াফা নিউজ এজেন্সি।
পশ্চিম তীরে সহিংসতা বৃদ্ধি:
গত ৭ অক্টোবরে হামাসের আক্রমণের পর থেকে, দখলকৃত পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি স্থাপনকারী ও ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় ১৫৪ জন ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের বন্দি বিষয়ক কমিশন।
দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বাহিনীর ধড়পাকড় অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ২ হাজার ১৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আজ বুধবার, হেবরন শহর থেকে দুইজন সিনিয়র সাংবাদিককে গ্রেফতার করেছে দখলদার বাহিনী।
ইসরাইলের হাজার হাজার নাগরিককে অস্ত্র রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বিন গাভির। তার মতে, এসব অস্ত্র ফিলিস্তিনিদের আক্রমণ থেকে ইসরাইলিদের রক্ষা করবে।
রাজনৈতিক:
আগামীকাল, গাজ্জা উপত্যকায় ইসরাইলের যুদ্ধের বিষয়ে মুসলিম ও আফ্রিকার দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে একটি শীর্ষ বৈঠকের আয়োজন করতে যাচ্ছে সৌদি আরব বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থার রাইটার্স।
মঙ্গলবার, মধ্যপ্রাচ্যে পাঁচ দিনের সফর শুরু করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক। এ সফরে তিনি মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি নিয়ে ইসরাইল ও পার্শ্ববর্তী দেশের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
গাজ্জা উপত্যকায় ইন্দোনেশিয়ার অর্থায়নে নির্মিত একটি হাসপাতালের নিচে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের টানেল রয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরাইল। তবে এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে ইন্দোনেশিয়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, গাজা উপত্যকায় অবস্থিত ইন্দোনেশিয়া হাসপাতালের প্রধান উদ্দেশ্য ফিলিস্তিনি জনগণের সেবা প্রদান করা।
