রবিবার, মে ১৯, ২০২৪

প্রস্তাবিত চুক্তি মেনে নেওয়ার ব্যাপারে যা বললেন হামাস শীর্ষ নেতা খলিল হাইয়া

যুদ্ধবিরতি ও বন্দী বিনিময়ের নতুন চুক্তির বিষয়টি এতদিন আলোচনা-পর্যালোচনা ও দেনদরবারের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলেও তুরস্কের প্রচেষ্টায় মিশর ও কাতারের প্রস্তুতকৃত নতুন প্রস্তাবিত  চুক্তি সরাসরি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেয় ফিলিস্তিন ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস।

সোমবার (৬ মে) ইসরাইলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিন স্বাধীনতাকামীদের সশস্ত্র লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেওয়া দলটির পক্ষ থেকে কাতার-মিশরের প্রস্তাবিত চুক্তি সরাসরি মেনে নেওয়ার কথা জানানো হয়।

নতুন প্রস্তাবিত চুক্তি সরাসরি মেনে নেওয়ার ব্যাপারে দলটির গাজ্জা ডেপুটি প্রধান খলিল হাইয়া বলেন,পূর্ণাঙ্গ রূপে যুদ্ধের অবসান, বাস্তুচ্যুতদের প্রত্যাবর্তন, গাজ্জায় অবাধে সহায়তা প্রবেশ, সম্পূর্ণ রূপে অবরোধ ও ইসরাইলী সেনা প্রত্যাহার, বন্দী বিনিময়ের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণে ফিলিস্তিনিদের মুক্ত করতে আমরা প্রস্তাবিত এই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছি। তা মেনে নেওয়ার অনুমোদন দিয়েছি। দখলদারদের পাগলাটে হত্যাযজ্ঞ (নারী-শিশু ও নিরীহ ফিলিস্তিনি হত্যা) বন্ধ করতে ও সত্যিকার অর্থে বন্দী মুক্তির লক্ষ্যে আমরা নমনীয়তা দেখিয়েছি।

প্রস্তাবিত নতুন চুক্তির বিশদ বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, কাতার-মিশরের প্রস্তুতকৃত যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে ৩ ধাপে আমাদের দাবী বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। প্রতিটি ধাপের মেয়াদ হবে ৪২ দিন। ১ম ধাপ থেকেই ইসরাইলকে বন্দী বিনিময়ের পাশাপাশি গাজ্জা থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু করতে হবে, বিশেষত নিস্তারিম থেকে। বাস্তুচ্যুতদের গাজ্জায় ফিরে আসার অনুমোদন দিতে হবে। এতে কোনো রকমের বাধা প্রদান করা যাবে না। ২য় ধাপে সম্পূর্ণ রূপে সেনা প্রত্যাহার ও সামরিক অভিযান বন্ধ করতে হবে ইসরাইলকে। ৩য় ধাপে সবধরণের অবরোধ তুলে নেওয়ার ও স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে হবে। লিখিত চুক্তি সাক্ষর করতে হবে। বন্দী বিনিময়েরও ৩টি ধাপ থাকবে। প্রতি ইসরাইলীর বিনিময়ে ইসরাইলকেই তাদের কারাগারে আটক থাকাদের মধ্যে ৩০জনকে মুক্তি দিতে হবে। যাদের মুক্তি দেওয়া হবে সকলের অবস্থা একই থাকতে হবে। (অর্থাৎ, ছোট ছোট বাচ্চাদের মুক্তিকে বন্দী বিনিময় বলে গণ্য করা হবে না)

দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিটির প্রতিটি ধাপ বাস্তবায়ন ও ইসরাইলের সম্মতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মধ্যস্থতাকারীরা আমাদের জানিয়েছেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট চুক্তির প্রতিটি শর্ত বাস্তবায়নের স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমরাও মধ্যস্থতাকারীদের পূর্ণাঙ্গ রূপে যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার কথা দিয়েছি। এখন পালা ইসরাইলের। তারা আমাদের ন্যায় প্রস্তাবিত চুক্তি মেনে নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে কি না মধ্যস্থতাকারীরা এবিষয়ে আমাদের কিছু জানায়নি। তাই হামাস এখন ইসরাইলের জবাবের অপেক্ষা করছে।

অপরদিকে আমেরিকার পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা হামাসের নতুন প্রস্তাবিত চুক্তি মেনে নেওয়ার অনুমোদনের বিষয়ে অবগত হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে তারা কাতার-মিশর ও আঞ্চলিক মিত্রদের সাথে আলোচনা করছে।

ইসরাইল মিলিটারীর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, বন্দী বিনিময় চুক্তির সবকিছু পর্যালোচনা করে দেখছে তাদের বিশেষজ্ঞ ও কর্মকর্তারা। পাশাপাশি সামরিক চাপ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ এর ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ আজ ৮ম মাসে প্রবেশ করলো। স্বাধীনতার লক্ষ্যে শুরু করা যুদ্ধে ফিলিস্তিন স্বাধীনতাকামী হামাস এখন পর্যন্ত সফল বলা যায়। কেননা ইসরাইলের ভয়াবহ হামলা ও অবরোধ সত্ত্বেও দলটি তাদের স্বাধীনতার লড়াই অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছে। নিজেদের শর্ত মোতাবেক ইসরাইলকে যুদ্ধবিরতি ও বন্দী বিনিময় চুক্তিতে যেতে বাধ্য করেছে। চাপে ফেলতে সক্ষম হয়েছে তৃতীয়বারের মতো চুক্তিতে যেতে।

সূত্র: আল জাজিরা

spot_imgspot_img

সর্বশেষ

spot_img
spot_img
spot_img
spot_img