বুধবার, এপ্রিল ১৭, ২০২৪

ফ্রিজে না রেখেও যেভাবে সংরক্ষণ করা যাবে কুরবানীর গোস্ত

কোরবানির ঈদে গোস্ত কাটা এবং বিতরণের পর চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় এতগুলো গোস্ত একসাথে সংরক্ষণের বিষয়টি। গোস্ত সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সেটাকে রেফ্রিজারেট করে রাখা সবচেয়ে সহজ ও নিরাপদ উপায় হলেও বিকল্প আরও নানা পদ্ধতিতে গোস্ত সংরক্ষণ করা যায়।

এ বিষয়ে পুষ্টিবিদরা জানান, গোস্ত উচ্চ তাপমাত্রায় জ্বাল দিয়ে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ছয় ঘণ্টা পর পর গোস্ত জ্বাল দিতে হবে, না হলে জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে।

এভাবে গোস্ত কয়েকদিন পর্যন্ত ভালো থাকে। পানিতে গোস্ত সেদ্ধ করে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। অনেকেই গোস্ত রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করেন। এজন্য মাংসগুলো মাঝারি আকারে কেটে পরিষ্কার পানিতে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এই মাংসের সাথে কোনো অবস্থাতেই চর্বি রাখা যাবে না।

এরপর গোস্তের পানি নিংড়ে নিয়ে তাতে যথেষ্ট পরিমাণে লবণ ও হলুদ মাখিয়ে নিতে হবে এবং ডুবো পানিতে সেই গোস্ত কিছুক্ষণ সেদ্ধ করা দরকার। গোস্ত আধা সেদ্ধ হলে অর্থাৎ কাঁচা গোস্তের গন্ধ যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেটা চুলা থেকে নামিয়ে গোস্তের পুরো পানি ছেঁকে ফেলতে হবে।

তারপর গোস্তের টুকরোগুলো শিকে গেঁথে রোদে দিতে হবে। এভাবে গোস্ত শুকাতে একটানা চার থেকে সাত দিন সময় লাগে। বাইরের ধুলোবালি থেকে গোস্তগুলোকে বাঁচাতে পাতলা কাপড় পেঁচিয়ে দিতে পারেন। গোস্তের সব পানি সম্পূর্ণভাবে শুকিয়ে গেলে যেকোনো এয়ারটাইট কন্টেইনারে রাখতে হবে। শুকনা এই গোস্তেটি হালকা গরম পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখার পর স্বাভাবিক নিয়মে রান্না করা যাবে। মাছের শুটকির মতো গরুর গোস্ত সম্পূর্ণ শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যায়। এই গোস্ত এছাড়া সরাসরি তেলে ভেজেও খেতে পারবেন।

এভাবে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় বা নরমাল ফ্রিজে তিন গোস্ত থেকে এক বছর পর্যন্ত গোস্ত সংরক্ষণ করা যায়। এক্ষেত্রে কন্টেইনারের গায়ে গোস্ত সংরক্ষণের তারিখটি লিখে রাখা ভালো। গোস্ত

তবে বাইরে রোদ না থাকলে এ পদ্ধতিতে গোস্ত সংরক্ষণ কঠিন হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে চুলার সাহায্যে গোস্ত শুকিয়ে নেয়া যেতে পারে। এজন্য গোস্তগুলো একটি পাত্রে নিয়ে চুলায় উচ্চ তাপমাত্রায় জ্বাল দিয়ে পানি সম্পূর্ণভাবে শুকিয়ে নিতে হবে। লেবু লবন পানিতে গোস্ত ডুবিয়ে রাখলে অনেকদিন পর্যন্ত ভালো থাকে।

লেবু ও লবণের সাহায্যেও গোস্ত সংরক্ষণ করেন। এজন্য গোস্তগুলো মাঝারি আকারে কেটে হালকাভাবে ছেঁচে নিতে হবে। এরপর লবণ ও লেবুর রসে ঘণ্টাখানেক ডুবিয়ে রাখেন, যেন গোস্তের ভেতরে ভেতরে সেটা পৌঁছায়। এভাবে গোস্ত কয়েকদিন পর্যন্ত ভালো রাখা যায়। এছাড়া গোস্ত ভেজেও সেগুলো সংরক্ষণ করা সম্ভব। এজন্য গোস্ত কেটে পরিষ্কার করে আদা বাটা, রসুন বাটা পেঁয়াজ বাটা দিয়ে গোস্তটি কিছুক্ষণ ম্যারিনেট করে রাখেন। এরপর গরম ডুবো তেলে মসলাসহ গোস্তগুলো ভেজে নিতে হবে এবং তেল ছেঁকে নিয়ে তা সংরক্ষণ করতে পারেন।

ডুবো তেলে গোস্ত সেদ্ধ করলে সেটা অনেকদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। এরপর অন্তত গোস্তগুলো উচ্চতাপে গরম করতে হবে। এভাবে গোস্ত ১৫ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত ভালো থাকে। এছাড়া মশলা ছাড়াই শুধুমাত্র ডুবো তেলে গোস্ত সেদ্ধ করে সংরক্ষণ করা যায়। এজন্য হাঁড়িতে যথেষ্ট পরিমাণে তেল গরম করে গোস্ত ডুবিয়ে পুরোপুরি সিদ্ধ করতে হবে।

দু-এক দিন পর পর তেলে ডোবানো গোস্ত গরম করে নিতে হবে। এভাবে ১৫ থেকে ৩০ দিন পর্যন্ত গোস্ত সংরক্ষণ করা যায়।

এছাড়া লবণ, সোডিয়াম নাইট্রেট ও সোডিয়াম ল্যাকটেট দিয়ে গোস্ত পুরো একদিন মেরিনেট করে রাখলে সেটা ফ্রিজে ৩০ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। এই পদ্ধতিতে গোস্তের পুষ্টিগুণ বজায় থাকে।

সূত্র: বিবিসি

spot_imgspot_img

সর্বশেষ

spot_img
spot_img
spot_img
spot_img
spot_img