বুধবার, এপ্রিল ১৭, ২০২৪

মিশরে ইখওয়ানুল মুসলিমিনের ২৪ সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে সিসির আদালত

মিশরে পৃথক দুইটি মামলায় দেশটির প্রভাবশালী সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের ২৪ সদস্যের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী আব্দুল ফাত্তাহ আল সিসি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণাধীন আদালত।

মিশরের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদপত্র আল-আহরামে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় বাহিইরা প্রদেশের দামানহুর শহরের ক্রিমিনাল কোর্টে ইখওয়ানুল মুসলিমিনের স্থানীয় ১৬ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়। তাদের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে প্রদেশের রাশিদ শহরে এই পুলিশের বাসে বোমা নিক্ষেপের অভিযোগ আনে সিসি প্রশাসন।

একই আদালত ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে আদ-দিলনিজাত শহরে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যার দায়ে ইখওয়ানুল মুসলিমিনের আট সদস্যকে মৃতুদণ্ডে দণ্ডিত করেন।

আল-আহরামে অবশ্য স্পষ্ট করা হয়নি যে, আদালতের এই আদেশই চূড়ান্ত না কি এর বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে। তবে মিশরের বাইরে থেকে পরিচালিত দেশটির মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ করা শিহাব অর্গানাইজেশন ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, জরুরি আদালত থেকে রায় হওয়ায় এটিই চূড়ান্ত রায়।

এর আগে গত ১৪ জুন অপর এক মামলায় ইখওয়ানুল মুসলিমিনের ১২ নেতাকর্মীর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রাখেন মিশরের সর্বোচ্চ আপিল আদালত। ২০১৮ সালে মামলায় তাদের প্রথম মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়।

দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ইখওয়ানুল মুসলিমিনের সাথে সংশ্লিষ্ট আলেম শায়েখ আবদুর রহমান আল-বার, সাফওয়াত হেজাজি, ইখওয়ানুল মুসলিমিনের রাজনৈতিক শাখা ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির (এফজেপি) সেক্রেটারি মোহাম্মদ আল-বেলতাজি ও এফজেপি দলীয় সাবেক যুবমন্ত্রী ওসামা ইয়াসিন রয়েছেন।

মিশরে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে ২০১৩ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে পুনর্বহাল করার আন্দোলনের সংশ্লিষ্টতা থাকার অভিযোগে মামলায় তাদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে ‘জনগণ ও পুলিশকে আক্রমণ করার জন্য অপরাধী চক্রকে আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম সরবরাহের’ অভিযোগ আনে আল সিসি সরকার।

২০১১ সালে গণবিপ্লবে মিশরে দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের পতন ঘটে। বিপ্লবের পরে ২০১২ অনুষ্ঠিত মিশরের প্রথম নির্বাচনে ইখওয়ানুল মুসলিমিনের রাজনৈতিক শাখা ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি (এফজেপি) বিপুল ভোটে জয় লাভ করে। ইখওয়ানুল মুসলিমিনের পক্ষ থেকে শহীদ মোহাম্মদ মুরসি দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

কিন্তু এক বছর পরই পশ্চিমাদের সমর্থন ও সৌদি-আরব আমীর এবং ইসরাইলের মদদে মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে বিশ্বাসঘাতক সেনা প্রধান সিসির নেতৃত্বে সেনাবাহিনী।

মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রতিবাদে জনগণ দেশটির বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ শুরু করেন। রাজধানী কায়রোর রাবা আল-আদাবিয়া স্কয়ারে অবস্থান নিয়ে মোহাম্মদ মুরসির ক্ষমতা পুনর্বহালের দাবিতে একটানা প্রতিবাদ সমাবেশ শুরু করেন তারা।

ওই বছরের ১৪ আগস্ট রাবা আল-আদাবিয়ার প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে বর্বর আক্রমণ চালায় সেনাবাহিনী। এক দিনের ওই বর্বর আক্রমণে আট শ’র বেশি বিক্ষোভকারী নিহত হন।

তখন থেকে মিশরে ইখওয়ানুল মুসলিমিনসহ সকল বিরোধীদলীয় নেতাদের ওপর দমন অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ওই সময় ইখওয়ানুল মুসলিমিন ও সংশ্লিষ্ট সব সংগঠনকে বেআইনি ঘোষণা করে সিসি প্রশাসন।

কারারুদ্ধ অবস্থায় প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি ২০১৯ সালের ১৭ জুন কায়রোর এক আদালতে শুনানি চলাকালে শাহাদাত বরণ করেন।

সূত্র : আলজাজিরা

spot_imgspot_img

সর্বশেষ

spot_img
spot_img
spot_img
spot_img
spot_img