সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় বইছে তিউনিসিয়ার ক্ষমতা দখলকারী প্রেসিডেন্ট কায়েস সাঈদের সরকারের উপর।
দেশটির সাবেক স্পিকার রশিদ আল ঘানুশী ও অন্যান্য বিরোধী দলীয় নেতাদের গ্রেফতার নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ক্ষমতাধর দেশগুলো।
তিউনিসিয়ার সাবেক স্পিকার আল ঘানুশী ও অন্যান্য নেতাদের গ্রেফতার এবং প্রধান বিরোধী দল আন নাহদার প্রধান কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়ায় আমেরিকার পক্ষ থেকে নিন্দা জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলা হয়, এসব কর্মকাণ্ড খোদ নতুন সরকারের লিখিত সংবিধানের সম্পূর্ণ বিপরীত।
সংসদের অনুভূতি খ্যাত বিরোধী পক্ষের উপর গণ-গ্রেফতার অভিযান দেশটির সরকারের অসহিষ্ণুতা ও নিষ্ঠুরতার প্রতিনিধিত্ব করে। অথচ তিউনিসিয়া-আমেরিকার দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কে মানবাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়।
এছাড়া মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে নিন্দা জানিয়ে বলা হয়, তিউনিসিয়ার বর্তমান পরিস্থিতিতে নিয়ে মালয়েশিয়া খুবই উদ্বিগ্ন।
পবিত্র রমজান মাসের সম্মান; স্বাস্থ্য ও বয়স বিবেচনায় সাবেক স্পিকার ও প্রধান বিরোধী দলপতি ঘানুশীর কারাদণ্ডাদেশের ব্যাপারে তিউনিসিয়াকে পুনর্বিবেচনার আহবান জানাচ্ছি।
অপরদিকে মুসলিম বিশ্বের প্রভাবশালী নেতা এরদোগানও ঘানুশীর গ্রেফতারে তুরস্কের অসন্তোষের কথা জানান। তিনি বলেন, “শুনেছি আন নাহদা পার্টির প্রধান আমার ভাই ঘানুশী গ্রেফতার হয়েছে। তিউনিসিয়ার সরকার তাকে গ্রেফতার করেছে। আমরা ফোনে তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। কিন্তু সম্ভব হয়নি। তবে আমরা যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে যাবো। যোগাযোগ হলে আমরা তাদের জানিয়ে দিবো যে, আমরা এই গ্রেফতারকে ভালো চোখে দেখছি না।”
ঘানুশীকে গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদের সময় আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য তার উকিলকে ট্রায়ালে প্রবেশ করতে না দেয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকেও নিন্দা ও অসন্তোষ প্রকাশ করে বিবৃতি দেওয়া হয়। এতে সম্পর্কচ্ছেদের ইঙ্গিতও দেয় সংস্থাটি।
বলা হয়, আমরা তিউনিসিয়াকে আত্মরক্ষার পাশাপাশি ন্যায্য বিচারের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধার গুরুত্বও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। রাজনৈতিক বহুত্ববাদও এক্ষেত্রে সমান গুরুত্ব রাখে। কেননা এগুলোর সবই গণতন্ত্রের অপরিহার্য অংশ। আর তিউনিসিয়ার সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্কের ভিত্তিও এসবের উপর নির্ভর করে।
জানা যায়, গত সোমবার (১৭ এপ্রিল) নিরাপত্তা বাহিনীদের উস্কানি ও কায়েস সাঈদের সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তিউনিসিয়ার প্রভাবশালী ইসলামপন্থী নেতা রশিদ আল ঘানুশীকে রাতে তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে উয়াইনা ন্যাশনাল গার্ড সামরিক ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানায় তার রাজনৈতিক দল আন নাহদা।
তার আইনজীবী মুনিয়া বাউলিয়ার ভাষ্যমতে, মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) ঘানুশীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে হাজির করা হলে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য তাকে আদালতে প্রবেশ করতে দেয়নি প্রশাসন। আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই তাকে কারারুদ্ধের আদেশ দেয় আদালত।
তিনি বলেন, স্বাধীন মতামত প্রকাশই যেনো কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে ঘানুশীর জন্য। এটি প্রকৃতপক্ষে পূর্বপরিকল্পিত বিচারের একটি নাটক। কারারুদ্ধের আদেশটি আগে থেকেই ঠিক করা ছিলো।
উল্লেখ্য, ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া গ্রেফতার অভিযানে তিউনিসিয়ার সর্বশেষ প্রধান বিরোধী দল আন নাহদার এখন পর্যন্ত মোট ২০ জন গ্রেফতার হয়েছেন।
শুধুমাত্র রশিদ আল ঘানুশীকেই ১০ বার আটক হয়ে আদালতে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হয়েছে।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট কায়েস সাঈদের যিনি ২০২১ সালে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে প্রেসিডেন্সিয়াল ডিক্রি জারির মাধ্যমে এককভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করে আসছেন, ঘানুশী ও সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকা দল আন-নাহদার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরণের অভিযোগ করে থাকেন। ঘানুশীর দলটিকে তিনি তিউনিসিয়ার নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করেন।
তার ভাষ্যমতে, রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করে সংসদ ভেঙ্গে দেওয়াকে সংসদের সর্বশেষ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আন-নাহদা অভ্যুত্থান বলে অভিযোগ করে থাকে।
এমনকি বিশেষ ক্ষমতাকে অভ্যুত্থানের নাম দিয়ে দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তুলতে নিরাপত্তা বাহিনীদেরও উসকানি দিচ্ছে বলে অভিযোগ আরোপ করেন ঘানুশী ও তার দলের বিরুদ্ধে।
এছাড়া সাবেক স্পিকার রশিদ আল ঘানুশীর বিরুদ্ধে তিনি দূর্নীতি, অর্থ-পাচার ও ইরাক এবং সিরিয়ার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সহায়তার অভিযোগও করে থাকেন।
সূত্র: আল জাজিরা
